ডেস্ক নিউজ:
আগামী সপ্তাহেই উপদেষ্টা পরিষদের সভায় নতুন সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট অনুমোদনের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।
শুক্রবার (২ মে) সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের ‘জুলাই বিপ্লব স্মৃতি হলে’ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন আয়োজিত ‘জুলাই বিপ্লব পরবর্তী বাংলাদেশ: গণমাধ্যমের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সভায় ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন তিনি।
উপ-প্রেস সচিব বলেন, বিগত বছরগুলোতে সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে একটি বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করেছে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট, যা জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচিত হওয়ার পর মৌলিক কোনো পরিবর্তন ছাড়াই ‘সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট’ নামে পুনঃপ্রকাশিত হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই আইন বাতিলের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ আইনের অধীনে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে করা সব মামলা বাতিল করা হয়েছে এবং নতুন করে আর কোনো মামলা করা হয়নি।
তিনি বলেন, আমরা আশা করছি, আগামী সপ্তাহে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় নতুন সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট অনুমোদিত হবে। প্রস্তাবিত আইনে আগের আইনের ৯টি নিবর্তনমূলক ধারা বাদ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, যেগুলোর আওতায় ৯৫ শতাংশ মামলা হয়েছিল। এসব ধারা বাতিল হলে ওই মামলাগুলোও স্বয়ংক্রিয়ভাবে খারিজ হয়ে যাবে।
প্রস্তাবিত আইনে গুরুতর সাইবার হ্যাকিং ছাড়া অন্য অপরাধে পরোয়ানা ছাড়া গ্রেফতারের বিধান বাতিল করা হচ্ছে উল্লেখ করে আবুল কালাম আজাদ বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিশ্বাস করে, এ আইন হলে সাংবাদিকদের হয়রানি অনেকটা কমে আসবে। দেশে মুক্ত সাংবাদিকতার পরিবেশ সৃষ্টিতে এটি হবে একটি বড় অগ্রগতি।
তিনি আরও বলেন, গত আট মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে অনেক সাংবাদিককে হত্যা মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে জুলাই-আগস্টের সময়কার ভূমিকার কারণে। কিন্তু এসব মামলার একটিও সরকারের কোনো সংস্থা দায়ের করেনি। বরং পুলিশের প্রতি পরিষ্কার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে— তদন্তে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না পেলে কোনো সাংবাদিককে যেন গ্রেফতার বা হয়রানি না করা হয়।
উপ-প্রেস সচিব বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ১৬৮ জন সাংবাদিকের অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়। যদিও এটি একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া— সাংবাদিকদের জন্য চালু হওয়া অ্যাক্রেডিটেশন প্রথায় মোট ৭ হাজার ৮৬৬টি কার্ড ইস্যু হয়েছে, যার মধ্যে নানা কারণে ৪ হাজার ৯৩৫টি বাতিল হয়েছে। তারপরও এই সিদ্ধান্ত নিয়ে সমালোচনা হওয়ায় সরকার বিষয়টি পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তিনি বলেন, যাদের কার্ড বাতিল হয়েছে, তাদের আপিলের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মাত্র সাতজন সাংবাদিক আপিল করেছেন। সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের পর নিরাপত্তাজনিত কারণে সাধারণ অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড দিয়ে প্রবেশ সীমিত করায় সাংবাদিকদের জন্য বিশেষ পাশ ইস্যু করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, এ পর্যন্ত প্রায় ৫৭০ জন সাংবাদিকের জন্য বিশেষ পাশ ইস্যু করা হয়েছে। অতীতে অনেক দলীয় কর্মীকেও সাংবাদিক পরিচয়ে কার্ড দেওয়া হয়েছিল, যার ফলে সচিবালয়ে পেশাদার সাংবাদিকদের কাজ করা কঠিন হয়ে পড়েছিল। এই অবস্থার অবসানে সরকার নতুনভাবে অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, সম্প্রতি একটি ঘটনায় তিনটি টেলিভিশনের তিন সাংবাদিক চাকরিচ্যুত হয়েছেন এবং একটি চ্যানেল স্বল্প সময়ের জন্য সম্প্রচার বন্ধ রেখেছে। যদিও কোনো প্রতিষ্ঠান আনুষ্ঠানিকভাবে কারণ জানায়নি, অনেকেই সামাজিক মাধ্যমে সরকারকে দায়ী করছেন, যা অনভিপ্রেত। সরকার এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেয়নি এবং চ্যানেলগুলো স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তিনি বলেন, দুর্নীতি, অন্যায় ও অপশাসন প্রতিরোধে জনগণের তথ্য জানার অধিকার গুরুত্বপূর্ণ। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শুরু থেকেই এ বিষয়ে সচেতন। তবে গণমাধ্যমগুলোকেও দায়িত্বশীল হতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সরকারের উদার নীতির সুযোগ নিয়ে অনেক মূলধারার গণমাধ্যম সাম্প্রতিক সময়ে অপপ্রচারে জড়িয়েছে। ফ্যাক্ট-চেকিং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো এর প্রমাণও পেয়েছে। ডিজিটাল মাধ্যমে গুজব ও ভুয়া তথ্যের বিস্তার জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করছে। সরকার গুজব প্রতিরোধে নানা উদ্যোগ নিয়েছে, কিছু ক্ষেত্রে সাফল্যও এসেছে। তবে লড়াইটা এখনো বড়।
সরকারের একার পক্ষে এই লড়াই কঠিন উল্লেখ করে তিনি বলেন, গুজব প্রতিরোধে সরকার যেটা বেছে নিয়েছে, তা হলো তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করা। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং সবসময় সাংবাদিকদের তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করে, নিয়মিত সংবাদ সম্মেলন উন্মুক্ত রাখা হয়। এমনকি সাধারণ মানুষও সেখানে প্রশ্ন করেন। প্রিয়-অপ্রিয় সব প্রশ্নের জবাব দেওয়ার জন্য আমরা সবসময় প্রস্তুত।
পাঠকের মতামত: